| ০৪ জুলাই ২০২০ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ | পড়া হয়েছে 403 বার
প্রিয় ব্যক্তিত্ব বি টি আর আই স্কুল শ্রীমঙ্গল এর প্রধান শিক্ষক কবি সায়েক আহমেদ এবং সাংবাদিক এস এ চৌধুরী জয় এবং শমশেরনগরে হাসপাতাল স্থাপন প্রসঙ্গে ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাস আমাকে দারুণ উৎসাহিত করেছে। এবিষয়ে অনেকের ইতিবাচক মন্তব্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত করেছে। হাসপাতাল স্থাপনের সবার সাথে একত্বতা ঘোষনা করে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
বৃটিশ আমল থেকে শমশেরনগর একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিমান বন্দর, পুলিশ ফাঁড়ি, ডাকঘর, ডাকবাংলো, শাহ পাহলভী গেইট, ডিজিটাল ইউনিয়ন পরিষদ, কাস্টমস, খাদ্য গোদাম, জন মিলনকেন্দ্র, ইসলামিক মিশন, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, রিক্রুটস ট্রেনিং স্কুল, বিএএফ শহীন কলেজ, পল্লীবিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্র, চা-বাগান সড়কপথ, রেলপথ ও আকাশপথ। এছাড়াও রয়েছে একাধিক স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, বীমা, ডায়াগোনেস্টিক সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত মার্কেট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি স্থাপনাসমূহ।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয, জনগুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবায় নেই কোন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও এম্বোলেন্স। ইসলামিক মিশন, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুব সীমিত অাকারে সাধারন মানুষের মাঝে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। জরুরী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহনে যেতে হয় জেলা অথবা বিভাগীয় সদরে। যার ফলে হারাতে হচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অসংখ্য গুরুত্বপর্ণ ও জটিল রোগীর। অদ্য একজন অসুস্থ মহিলার শমশেরনগরে ডাক্তার ও হাসপাতালের অভাব নিয়ে হতাশাগ্রস্থ fb পোষ্ট অনেকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। খুব কষ্ট হয় যখন দেখি ডাক্তারের অভাবে এলাকার মানুষ সাধারন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই শমশেরনগর হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত মানুষের এখন যুগোপযোগী দাবী।
এছাড়াও ভৌগলিক কারনে পার্শবর্তি ৬/৭ টি ইউনিয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে শমশেরনগর অবস্থান। ফলে এসব এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা বানিজ্য, হাটবাজার ও স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি শমশেরনগর কেন্দ্রীক। এলাকা সহ বিশাল পরিমানের জনসাধারনেরও শমশেরনগর হাসপাতাল স্থাপনের চাহিদা দীর্ঘদিনের।
এক যুগ আগেও শমশেরনগরে ডাক্তারের এত সমস্যা ছিল না।বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য, অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন। তাঁদের চেম্বারে প্বার্শবর্তী এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা গ্রহনের জন্য ভীড় লেগে থাকত। তাঁরা শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালন করেননি। মানবতার সেবায় অপরিসীম অবদান রেখে আমাদের ঋণী করে গেছেন। আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তাদের স্মরণ করছি, ডাঃ এটি এস নুরুন্নবী, ডাঃ মুজিবুর রহমান, ডাঃ সানাওয়ার আলী, ডাঃ সেনশর্মা, ডাঃ সুবল চন্দ্র দেবনাথ ও ডাঃ উপেন্দ্র দেবনাথ প্রমূখ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠায় অনেক বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হযেছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও সেবামূলক দুই ধরনেরই হাসপাতাল হতে পারে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে শেয়ার হোল্ডারগণ তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালনা করেন। অপরদিকে স্থানীয় দানবীর ব্যক্তিদের দান অনুদানে সেবামূলক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে একটি পরিচালনা বোর্ড কার্যক্রম পরিচালনা করে। বানিজ্যিক অথবা সেবামূলক, যেকোন পর্যায়ে উদ্দোগ গ্রহন করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
সেবামূলক হাসপাতালের দৃষ্ঠান্ত সরূপ বলা যেতে পারে, ১৯৭৮ সালে দেশবরণ্য কয়েকজন ব্যক্তির উদ্দোগে “ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ” বেসরকারিভাবে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও সাহায্যপুষ্ট অলাভজনক, সেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার, দেশি বিদেশি দানশীল ব্যক্তি ও সংস্থার সাহায্য সহাযোগিতায় এবং হাসপাতালের নিজস্ব আয়ে পরিচালিত হয়। বর্তমানে World Health Organization (WHO) হাসপাতালকে সহযোগীতা করে। এসব হাসপাতাল থেকে অভিজ্ঞতার আলোকে সবাই আন্তরিক চেষ্টা করলে আপাদত স্বল্প পরিসরে হলেও একটি হাসপাতাল বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
শমশেরনগর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে এর সভাপতি ময়নূল ইসলাম খাঁনের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক সাড়া দিয়ে একলক্ষ টাকা ঘোষনা দিয়েছেন। এই আশার আলোর ঝিলিক আমাকে বেশ আন্দোলিত করেছে। দেশে বিদেশে উনার মত আরোও ৪৯ জন স্বচ্ছল, দানবীর, হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে আসলে আমাদের স্বপ্নের হাসপাতাল আলোর মুখ দেখতে পাবে। এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রবাসী ভাইদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা অবশ্যই এই মহতি উদ্দোগে হাত বাড়িয়ে দেবেন। এবং দাঁতা সদস্যগণ এলাকাবাসীর কাছে আজীবন সম্মান ও ভালবাসায় সমাদৃত থাকবেন। এছাড়াও সদ্যানুযায়ী আগ্রহী সকল ব্যক্তির দান অনুদান গ্রহণ করে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আমার ধারনা, স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা ও সহনশীল মানসিকতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে দাঁতাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব। আমার জানামতে, অনেক দানবীর ব্যক্তির এলাকায় একটি হাসপাতাল স্থাপনে ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাঁরা ইতিবাচক ও সুষ্ট পরিবেশের অপেক্ষায় আছেন।
বিশেষকরে এলাকার প্রতিষ্ঠিত প্রবীন ও নবীন ডাক্তারগণের এদতসংক্রান্ত অভিজ্ঞ পরামর্শ, সহযোগীতা ও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। এব্যাপারে এলাকার ডাক্তারগনের যথেষ্ঠ আগ্রহ আছে। এছাড়াও সরকারের সংশ্লিস্ট বিভাগ ও রাজনৈতিক নেতৃবিন্দের সহযোগীতা গ্রহনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় এলাকার সর্বস্থরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে। এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে মান-অভিমান, মতাদর্শ, মতবিরোধ ভুলে গিয়ে আমাদের এক কাতারে দাঁড়ানোর এখনই সময়। আমাদের সমন্বয়হীনতায় এমনি আরোও অনেক কিছু স্থবিড় হয়ে আছে।
শমশেরনগরবাসী ঐক্যবদ্ধ ও ইতিবাচক চিন্তা চেতনার ফসল স্বনামধন্য সুজা মেমোরিয়াল কলেজ, জনমিলন কেন্দ্র, ইসলামিক মিশন, আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল সহ নানা প্রতিষ্ঠান। পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রবীন নবীনদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আত্নবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলে এবারও আমরা জয়ী হব ইনশাল্লাহ। এই মহতি উদ্দোগ গ্রহন করা হলে এর সাথে আমি ও আমাদের সংগঠন সম্পৃক্ত হতে পারলে ধন্য হবো।
বর্তমান প্রজন্ম ও তরুণ্যের উচ্ছাসকে কাজে লাগিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। তাই শমশেরনগরের সকল স্বেচ্চাসেবী সামাজিক, ক্রিড়া, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে সমন্বয় করে উদ্দোগ গ্রহন করা যেতে পারে।
“শমশেরনগর হাসপাতালের সামনে একটি এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে” এই দৃশ্যট কেন জানি বারবার চোখের সামনে ভাঁসছে।
শমশেরনগরবাসীর স্বপ্ন পূরনের প্রত্যাশায়।
শামছুল হক মিন্টু
সদস্য
নবধারা শমশেরনগর।